আপনি কি পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম খুজতেছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেল টি আপনাদের জন্য। আজকের আর্টিকেলে পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম (১০+ নমুনা সহ) শেয়ার করা হবে। কথা না বাড়িয়ে তাহলে চলুন শুরু করি।
কোনো বিশেষ উদ্দেশে মানবমনের কোনো ভাব, সংবাদ, তথ্য, আবেদন ইত্যাদি অপরের কাছে লিখিতভাবে জানানো হলে, তাকে সাধারণভাবে পত্র বা চিঠি বলে। (চিঠি লেখার নিয়ম)
যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হল ‘চিঠি’। চিঠি শুধু যোগাযোগেরই সহজ মাধ্যম নয়, বরং স্বল্প ব্যয়ে যোগাযোগ স্থাপনে চিঠির কোনো বিকল্প নেই। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন ও সমাজের দায়িত্বশীল পদাধিকারী মানুষের কাছে নানা প্রয়োজনে চিঠি লিখতে হয়। যদিও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, অয়্যারলেস, টেলেক্স, ফ্যাক্স, মোবাইল, ইন্টারনেট, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে প্রয়োজনীয় খবরাখবর অপরের কাছে খুব সহজেই পৌঁছানো যায়, তদুপরি সুপ্রাচীন মাধ্যম এই চিঠির গুরুত্ব এতটুকু কমে নি। (চিঠি লেখার নিয়ম)
‘চিঠি’– এই কথাটি শুনলেই পাঠকের মন হঠাৎ কেমন চনমন্ করে ওঠে। অর্থাৎ, ‘চিঠি’ যে ভাব বিনিময় করে তা আর অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্ভব নয় বলে চিঠির গুরুত্ব সর্বজনীন। লেখক চিঠিতে নিজেকে উজাড় করে উপস্থাপন করে আর পাঠক তা অনুভব করে। (চিঠি লেখার নিয়ম)
পত্রের প্রকারভেদ সাধারণত চার ধরনের পত্রই প্রধান।
চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানবো তবে চিঠি লেখার নিয়ম জানার আগে আমরা পত্র বা চিঠি এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে নিবো।
- ব্যক্তিগত পত্র (Personal Letter)
- সামাজিক পত্র (Jocial Letter)
- ব্যবহারিক বা বৈষয়িক পত্র (Official Letter)
- বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক পত্র (Commercial or Business Letter)
Table of Contents
- 1 চিঠি লেখার নিয়ম
- 2 ব্যক্তিগত পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম (Personal Letter)
- 3 কয়েকটি পত্র বা চিঠির নমুনা
- 3.1 ০১। কী ধরনের বই পড়া উচিত তা জানিয়ে ছোট ভাইকে একটি চিঠি লেখ।
- 3.2 ০২। তুমি আগামী পরীক্ষার জন্যে কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছ তা জানিয়ে তোমার পিতাকে একটি চিঠি লেখ।
- 3.3 ০৩। শিক্ষাসফরে যাবার জন্যে কলেজে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা পাঠানোর জন্যে পিতার কাছে চিঠি লেখ।
- 3.4 ০৪। স্মার্ট ফোন ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ জানিয়ে ছোট ভাইকে পত্র লেখ।
- 3.5 ০৫। কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে বন্ধুর কাছে চিঠি লেখ।
- 3.6 ০৬। তোমার কলেজে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নবীনবরণ উদযাপনের বিবরণ দিয়ে বন্ধুর নিকট একটি পত্র লেখ।
চিঠি লেখার নিয়ম
পত্র রচনায় সাধারণ নিয়ম চিঠি লিখতে হলে কতকগুলো সাধারণ নিয়ম মেনে চলতে হবে।
- চিঠির প্রকাশভঙ্গি আকর্ষণীয় হতে হবে। এর জন্যে সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় চিঠি লিখতে হবে।
- পত্রে কোনো কঠিন শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। এবং হাতের লেখা যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। ভাষা প্রয়োগেও শুদ্ধতা বজায় রাখতে হবে।
- চিঠির বক্তব্য হবে সুস্পষ্ট। পত্রে অনাবশ্যক কিংবা অতিরঞ্জিত করে কোনোকিছু না লেখাই ভালো।
- চিঠি লেখার পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। এবং খামে নাম ঠিকানা স্পষ্টাক্ষরে লিখতে হবে।
ব্যক্তিগত পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম (Personal Letter)
নিতান্ত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা ব্যক্তিগত ভাব-ভাবনা প্রকাশের তাগিদে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, আপনজন ও পরিচিতজনের কাছে লিখিত চিঠিকে ব্যক্তিগত চিঠি (Personal Letter) বলে। সাধারণত ব্যক্তিগত প্রয়োজনে— ব্যক্তিমনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনা এবং ব্যক্তিজীবনের নানাধরনের সমস্যা ইত্যাদি ব্যক্তিগত পত্রের মূল উপজীব্য। যেমন: পিতার কাছে পুত্রের পত্র, পুত্রের কাছে পিতার পত্র, ছোট ভাইয়ের কাছে বড় ভাইয়ের পত্র, বন্ধুর কাছে পত্র, ছোট ভাই-বোনকে আদেশ বা উপদেশমূলক পত্র, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্যে কিংবা পুরস্কার প্রাপ্তির জন্যে অভিনন্দন পত্র ইত্যাদি ব্যক্তিগত পত্রের অন্তর্ভুক্ত। (চিঠি লেখার নিয়ম)
ব্যক্তিগত চিঠি লেখার নিয়ম
- চিঠির ওপরের মঙ্গলসূচক শব্দ। (আজকাল ব্যক্তিগত চিঠিতে মঙ্গলসূচক শব্দের ব্যবহার কেউ করেন না)
- চিঠির ওপরের ডান কোণে স্থান ও তারিখ।
- চিঠির ওপরের অংশের বাঁ দিকে প্রাপকের উদ্দেশে সম্বোধন বা সম্ভাষণ।
- চিঠির বক্তব্য বিষয় বা পত্রগর্ভ। পত্রগর্ভে- প্রাক্-ভাষণ বা ভূমিকা, পত্রসার, বিদায় ভাষণ অন্তর্গত।
- নিবেদন এবং স্বাক্ষর।
- চিঠির শিরোনাম। খামের উপর পরিষ্কারভাবে ঠিকানা লিখতে হবে (বিদেশি চিঠিতে ঠিকানা হবে ইংরেজি ভাষায়)।
কয়েকটি পত্র বা চিঠির নমুনা
পত্র বা চিঠির মাধ্যমে সব সময় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। কোথাও দেখে বা মুখস্ত করে পত্র বা চিঠি লেখা সম্ভব না। তবে লেখার ধরণের জন্য আমরা কিছু নমুনা নিচে উল্লেখ করছি। নমুনাতে যেসব পত্র বা চিঠি রয়েছে-
- কী ধরনের বই পড়া উচিত তা জানিয়ে ছোট ভাইকে একটি চিঠি।
- তুমি আগামী পরীক্ষার জন্যে কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছ তা জানিয়ে তোমার পিতাকে একটি চিঠি।
- শিক্ষাসফরে যাবার জন্যে কলেজে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা পাঠানোর জন্যে পিতার কাছে চিঠি।
- স্মার্ট ফোন ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ জানিয়ে ছোট ভাইকে পত্র।
- কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে বন্ধুর কাছে চিঠি।
- তোমার কলেজে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নবীনবরণ উদযাপনের বিবরণ দিয়ে বন্ধুর নিকট একটি পত্র।
০১। কী ধরনের বই পড়া উচিত তা জানিয়ে ছোট ভাইকে একটি চিঠি লেখ।
স্নেহের ‘ক’,
আমার অনেক অনেক স্নেহ নিও। আশা করি ভালো আছ। কলেজে এসে তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। বেশি মনে পড়ে তোমার আর আমার মধ্যে গল্পের বই আর কলম নিয়ে যে ছোট ছোট ঝগড়া হতো তার কথা। কোনো গল্পের বই-ই তুমি আগে না পড়ে আমাকে দাও নি। কিন্তু কলেজের বৃহৎ গ্রন্থাগারে পা ফেলতেই, সেসব স্মৃতি আমার দু চোখে জল নিয়ে এল।
স্যার সেদিন বাংলাসাহিত্য ক্লাসে ‘বই পড়া’ প্রবন্ধটি সম্পর্কে পাঠ দিচ্ছিলেন। বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে মহান ঔপন্যাসিক লিয়েফ্ তলস্তয়ের একটি বাণী উচ্চারণ করলেন- ‘Three things are essential for life and these are books books and books.’ পাশাপাশি আবার এ-কথাও বললেন যে, সব বই-ই যে পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই, তোমাদের জীবনগঠনে যেসব বই উপকারে আসবে শুধু সেগুলোই পড়া ভালো। সত্যি কথা কি, স্যারের কথাগুলো শোনার পর পরই বই বাছাইয়ের ব্যাপারটা তোমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলাম বলেই তোমাকে এই চিঠি লেখা। (চিঠি লেখার নিয়ম)
আমি জানি, বই-পড়ার নেশা তোমার এখনও আছে। বইয়ের মতো এমন ভালো সঙ্গী সারাজীবনেও খুঁজে পাবে না। তাই লেখাপড়ার ফাঁকে অবসর সময়টাতে কিছু ভালো বই পড়ে জীবনের পাথেয় সঞ্চয় করে রাখা ভালো। আরেকটি কথা হল, আমাদের স্যার বই পড়ার ব্যাপারে যে কথাগুলো বললেন তা তোমার জীবনেও প্রতিফলন ঘটারে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
🔰🔰 আরও দেখুন: আবেদনপত্র লেখার নিয়ম – আবেদন পত্রের নমুনা
🔰🔰 আরও দেখুন: চারিত্রিক সনদপত্র লেখার নিয়ম (Word+PDF ফাইল)
আমার মনে হয়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনীষীদের জীবনী, আদর্শবান ব্যক্তিদের জীবনচরিত— এসব বই পড়ার মধ্য দিয়ে তুমি যেমন আনন্দ পাবে, একইসঙ্গে তাঁদের জীবনী থেকে আদর্শ অনুসরণ করে তোমার জীবনকে যেমন গড়তে পারবে, তেমনি দেশ ও কাল সম্পর্কেও সচেতন হতে পারবে। পাশাপাশি ধর্মীয় বই তো পড়তে হবেই। তোমার জন্যে ‘সত্য-স্রষ্টা—সুখ’ বইটি উপহার হিসেবে পাঠালাম, বইটি পেয়ে তুমি খুব খুশি হয়েছ জানতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আজ এখানেই শেষ করছি, নিজের লেখাপড়ার দিকে খেয়াল রেখো। তোমাদের সবার কুশল কামনা করি। মা-বাবাকে সালাম জানিও। (চিঠি লেখার নিয়ম)
ইতি
তোমার প্রিয় ‘সাদিয়া’
০২। তুমি আগামী পরীক্ষার জন্যে কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছ তা জানিয়ে তোমার পিতাকে একটি চিঠি লেখ।
শ্রদ্ধেয় ‘ক’,
আমার সালাম জানবেন। আশা করি পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ আছেন। আমার অন্তরাত্মার কামনা এটাই। আর মাত্র দু মাস পরে আমার ফাইনাল পরীক্ষা, যদিও আপনি পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছুই জানতে চান নি, তবু আমি জানি, আপনি উদ্বিগ্ন আছেন। ‘Make hay while the sun shines’- চিঠিতে লেখা আপনার উপদেশ-বাণীটি পড়েই আমি তা বুঝতে পেরেছি।
সে যাক, বিগত পরীক্ষাগুলোতে আমি যে কৃতিত্ব দেখিয়েছি– এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ ইতোমধ্যেই সব বিষয়ের সম্পূর্ণ সিলেবাসই আমার পড়া হয়ে গেছে। এখন শুধু রিভিশন দিচ্ছি। সব বিষয় সম্পর্কে আপনার নির্দেশ যথাসাধ্য পালনে যত্নবান হয়েছি। আমাদের শিক্ষকগণও প্রতিটি বিষয়ে পরীক্ষার জন্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বাছাই করে আমাদের বোঝা কমানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমি পাঠ্য সব বিষয়ই পড়ছি, কেননা আমার লক্ষ্য কলেজের মধ্যে সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করা। (চিঠি লেখার নিয়ম)
আর এটাও সত্য যে, প্রতি বছর আমাদের কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই জিপিএ ০৫ অর্জন করে। এর মধ্যে আমি আমার নামটি অবশ্যই সংযোজন করতে চাই, তবে গোল্ডেন ০৫ হিসেবে। এ প্রসঙ্গে আমি আপনার উপদেশ-বাণীটি কার্যকর বলে মনে করি- ‘Slow but steady wins the race. (অধ্যবসায়ের ফলে জীবনে সফলতা লাভ হয়)’— তদ্রূপ অধ্যবসায়ে আমার কোনো ত্রুটি নেই বলেই সফলতা নিশ্চিত- এ কথা আমি জোর দিয়েই বলতে পারি। (চিঠি লেখার নিয়ম)
আপনি এবং মা উভয়েই আমার জন্যে দোয়া করবেন। আমি একপ্রকার ভালোই আছি। ছোটদের জন্যে আদর রইল।
ইতি
তোমার প্রিয় ‘সাদিয়া’
০৩। শিক্ষাসফরে যাবার জন্যে কলেজে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা পাঠানোর জন্যে পিতার কাছে চিঠি লেখ।
শদ্ধেয় ‘ক’,
আমার সালাম জানবেন। আশা করি পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ আছেন। আমার অন্তরাত্মার কামনা এটাই। আব্বু, আমাদের কলেজের বার্ষিক শিক্ষাসফরের তালিকায় এবার আমি অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। প্রতিবছরের মতো এবারও আমাদের কলেজ শিক্ষাকে বাস্তবমুখী এবং দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়ের উদ্দেশ্যে এ শিক্ষাসফরের আয়োজন করেছে। শিক্ষাসফরে এবার আমরা বগুড়া মহাস্থানগড় যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বগুড়া জেলার ইতিহাস প্রসিদ্ধ করতোয়া নদীর তীরে এবং ঢাকা-দিনাজপুর বিশ্বরোডের পাশে এই ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড় অবস্থিত। প্রাচীনযুগের বহু ধ্বংসাবশেষ এখানে বিদ্যমান। এটি পুরাকীর্তির অন্যতম নিদর্শনস্থল। (চিঠি লেখার নিয়ম)
আমাদের এ-সফর তিন দিনের জন্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্যে আপনার অনুমতি প্রার্থনা করছি, উপরন্তু এর জন্য একহাজার টাকারও প্রয়োজন। এ সপ্তাহের মধ্যেই টাকা জমা দিতে হবে, যত দ্রুত সম্ভব টাকাটা পাঠিয়ে দিলে ভালো হয়। আমি একপ্রকার ভালো আছি। যথারীতি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি বলে আমার লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাসার সবার প্রতি শ্রেণিমতো সালাম ও দোয়া থাকল।
ইতি
তোমার প্রিয় ‘সাদিয়া’
০৪। স্মার্ট ফোন ব্যবহার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় পরামর্শ জানিয়ে ছোট ভাইকে পত্র লেখ।
স্নেহের ‘ক’,
আমার অনেক অনেক স্নেহ নিও। আশা করি ভালো আছ। সম্প্রতি মোবাইল ফোন কেনার পর চিঠি লেখা একেবারে বন্ধই করে দিয়েছ। এটা কিন্তু ঠিক নয়। চিঠি লেখার মাধ্যমে তোমার ভাষার একটা স্বকীয়তা বা স্টাইল গড়ে ওঠে, যা তোমার শিক্ষাজীবনে কাজে লাগবে। টিফিনের টাকা ধীরে ধীরে সঞ্চয় করে মোবাইল কিনেছো শুনে খুশি হলাম কিন্তু এ বয়সে মোবাইল ফোনটি তোমার জন্যে কতটা প্রয়োজনীয় তা কি ভেবে দেখেছো? কিনেই যখন ফেলেছো তো এর যথার্থ ব্যবহারে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। যোগাযোগের প্রয়োজনে মোবাইল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বটে কিন্তু অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় অর্থের যেমন অপচয় ঘটে তেমনি মূল্যবান সময়ও নষ্ট হয়। (চিঠি লেখার নিয়ম)
সময়ে-অসময়ে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠলে লেখাপড়ায় মনোযোগ নষ্ট হয়। মাত্রাতিরিক্ত আলাপ স্থির বুদ্ধিসম্পন্ন সৃজনশীল মনমাসকিতা তৈরির ক্ষেত্রেও অন্তরায়। তোমার জেনে রাখা প্রয়োজন যে, মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন মানবদেহের ক্ষতিসাধন করে থাকে। এর রেডিয়েশন মানুষের দেহে উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ব্রেন টিউমারের মতো কঠিন রোগের সম্ভবনা বৃদ্ধি করে। এছাড়া নার্ভ ক্ষতিগ্রস্থ করে, চোখের ক্যাটরেখ, রক্তের উপাদানগত পরিবর্তনেও রেডিয়েশন প্রভাব ফেলতে পারে। মোবাইলের রিংটোন হার্টের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকর। (চিঠি লেখার নিয়ম)
আজকাল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনেকে নানা রকমক অসামাজিক ও অনৈতিক কার্যকলাপেও জড়িয়ে পড়ছে। পড়ালেখার ক্ষতি করে গান শোনা, গেইম খেলা, নানারকম ছবি দেখা ইত্যাদি কার্যকলাপ ছাত্রজীবনকে ক্রমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সুতরাং এসব বিষয়ে সতর্ক থাকবে বলে আমি আশা করি। আমি তোমার বড় ভাই, অথচ আমার কোনো মোবাইল ফোন নেই, অবশ্য আমি এর কোনো প্রয়োজনও অনুভব করি না। লেখাপড়ার ক্ষতি হবে- এই ভেবেই মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে আমি বিরত আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগ পর্যন্ত মোবাইল ফোন কিনব না বলেই স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়গুলো একটু ভেবে দেখবে বলে আশা করি। (চিঠি লেখার নিয়ম)
আজ এখানেই শেষ করছি, নিজের লেখাপড়ার দিকে খেয়াল রেখো। তোমাদের সবার কুশল কামনা করি। মা-বাবাকে সালাম জানিও।
ইতি
তোমার প্রিয় ‘সাদিয়া’
০৫। কলেজে তোমার শেষ দিনে মনের অবস্থা বর্ণনা করে বন্ধুর কাছে চিঠি লেখ।
প্রিয় ‘ক’,
দু-ঘণ্টা হল কলেজ থেকে ফিরেছি। পেটে খিদে আছে, অথচ হৃদয়-মন দুঃখে ভারাক্রান্ত হওয়ায় খেতে ইচ্ছে করছে না। আমার মনে হল তোমার কাছে দু-কলম লিখতে পারলে আমার বেদনাহত হৃদয় কিছুটা হলেও শীতল হবে। তুমি তো জান আজ আমাদের কলেজ জীবনের শেষ দিন, বিদায়ের দিন। (চিঠি লেখার নিয়ম)
গতদিনই আমাদের ফরম পূরণের শেষদিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ আমাদের বিদায়ের দিন। কলেজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়সংবর্ধনা দেয়া হবে। আমরা যারা পরীক্ষার্থী ছিলাম সবাই অন্যদিনের চেয়ে দু ঘণ্টা আগেই কলেজে এসে হাজির হয়েছি। কিন্তু এ কী কাণ্ড! আজ আর কারো মনে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো চঞ্চলতা, সবার চোখেমুখে একটা বিষণ্নতার ছাপ। চারদিকে যেন বিদায়ের সকরুণ ঘণ্টা বাজছে, গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মতো সে- ধ্বনি আকাশে-বাতাসে প্রতিফলিত হয়ে আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করতে লাগল। মনে হল সবচেয়ে বেশি কষ্ট বোধহয় আমিই পাচ্ছি। আসলে এ-কষ্ট এবং দুঃখ কাউকে বোঝানো কিংবা বলা যায় না বলেই এর তীব্রতা ও দহন এত বেশি।চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জানবো তবে (চিঠি লেখার নিয়ম)
সে যাক, যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কলেজের প্রথম বর্ষের কৃতী ছাত্রী বৃষ্টি আমাদের সবাইকে ফুলের মালা পরিয়ে দিল। সূচনা হল বিদায়ের। ছাত্রসংসদের সম্পাদক লিয়ন সূচনা-ভাষণ দিলেন। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেকে বক্তব্য রেখে আমাদের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করল। কলেজের শ্রেষ্ঠছাত্র হিসেবে আমাকে যখন বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যে বলা হল, তখন আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না কীভাবে কথা বলব। বন্ধু, তুমি তো জান— স্বভাবতই আমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ, তার ওপর বিদায়ের এই দিনে কিছু বলা আমার জন্যে যে একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু অধ্যক্ষের আদেশ বলে তা প্রত্যাখ্যান করা আদৌ সম্ভব নয়, শেষ পর্যন্ত বক্তব্যের জন্যে দাঁড়ালাম— ‘এত আশা ভালবাসা, এতই নিরাশা, এত দুঃখ কেন?’(চিঠি লেখার নিয়ম)
যেতে নাহি মন চায়, এতটুকু বলার পর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি জানি আমার মুখ দিয়ে আর একটি অক্ষর বের হলে তা গগনবিদারী চিৎকার হয়ে বের হতো। দু-চোখের জল বাধা মানল না। দীর্ঘ পনেরো সেকেন্ড পর অতি কষ্টে উচ্চারণ করলাম আমাদের জন্যে দোয়া করবেন। এই বলে আমার বক্তব্য শেষ করতে হল। সভাপতির ভাষণে বক্তব্য রাখলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন অধ্যক্ষ। তিনি আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে চলার পথের পাথেয় সম্পর্কে নানা উপদেশ দিলেন। সবশেষে আমাদের সবাইকে উপহার হিসেবে একটি করে বই দেয়া হল। এরপর সঙ্গীতানুষ্ঠান। বিদায়ের গানে বেদনার সুর বেজে উঠতেই আমাদের কলেজজীবনের শেষ দিনের মুহূর্তগুলো হৃদয়পটে ছবির মতো আটকে গেল। এ-স্মৃতি কখনোই ভোলার নয়। আজ আর নয়। আমার জন্যে দোয়া করবে। বাসার সবার প্রতি শ্রেণিভেদে স্নেহ ও সালাম রইল।
ইতি
তোমার প্রিয় ‘সাদিয়া’
০৬। তোমার কলেজে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নবীনবরণ উদযাপনের বিবরণ দিয়ে বন্ধুর নিকট একটি পত্র লেখ।
সুপ্রিয় ‘ক’,
প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। তোমার পত্র পেয়েছি সপ্তাহ খানেক আগে। গতকাল সমাপ্ত হওয়া নবীনবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে বিগত কয়েকদিন আমার ব্যস্ততাপূর্ণ দিন কেটেছে। তাই উত্তর দিতে এ বিলম্ব।
প্রিন্সিপাল স্যারের নির্দেশে গঠিত হয় নবীনবরণ উদযাপন কমিটি। কলেজ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল দশটায়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় জেলা প্রশাসক। এছাড়া স্থানীয় গুণী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কলেজ অধ্যক্ষ। অনুষ্ঠান উপলক্ষে কলেজ ভবন সাজানো হয়েছিল অপরূপ সাজে। নবীনদের অভ্যর্থনা জানাতে কাগজ কেটে বিভিন্ন ফুল ও লেখার দেয়াল শোভাময় করে তোলা হয়েছিল।
দিনটি ছিল রোববার। সকাল ন’টায় কলেজের উদ্দেশে পা বাড়াতেই অনাবিল আনন্দে আমার মনটা ভরে উঠল। কিছু সময়ের ব্যবধানেই কলেজে গিয়ে হাজির হলাম। শুরু হল নবীনবরণ অনুষ্ঠান। পবিত্র কালামে পাক থেকে তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপর ‘নবীনবরণ শুভেচ্ছা ভাষণ’ পাঠ করে শোনালেন কলেজ ছাত্র সংসদের সাংস্কৃতিক সম্পাদক রায়হানুল কবীর। নবীনদের পক্ষ থেকেও প্রতিভাষণ পাঠ করে শোনানো হয়। তারপর নবীনদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করলেন মাননীয় অধ্যক্ষ। (চিঠি লেখার নিয়ম)
তিনি তাঁর বক্তব্যে বিশেষভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে কলেজের সুনাম ও ঐতিহ্য রক্ষার সুমহান দায়িত্বের কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন। আহ্বান জানান সুশিক্ষায় আলোকিত হওয়ার জন্য। পাশাপাশি শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়- এসব বিষয়ে অনেক নীতিবাক্য ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে নানা উপদেশ দিলেন। অধিকাংশ বক্তার কণ্ঠেই ধ্বনিত হলো আমাদের প্রতি একটিই আকুতি— তা হল ছাত্র-রাজনীতিতে আমরা যাতে জড়িত না-হই। (চিঠি লেখার নিয়ম)
আলোচনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমি বক্তৃতাদানের জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। প্রস্তুতিও ছিল। তা সত্ত্বেও উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সামনে কথা বলতে গিয়ে সত্যিই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। তবে নার্ভাসনেস কাটিয়ে বক্তব্য শেষ করেছিলাম সুন্দরভাবেই। সে যাক, সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠানটি সত্যিকার অর্থেই সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। নতুন বন্ধু ও সহপাঠীদের কথা পরে একদিন লিখব। আজ আর নয়। তুমি ভালো থেকো, সুন্দর থেকো, শ্রেণিভেদে সালাম ও স্নেহ রইল। (চিঠি লেখার নিয়ম)
ইতি
তোমার প্রিয় ‘সাদিয়া’
আশা করছি চিঠি লেখার নিয়ম নিয়ে তোমাদের আর কোন কনফিউশন নেই। এর পরও কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে আমাদের কমেন্টে বলতে পারেন। আমরা দ্রুতার সহিত আপনার মূল্যবান কমেন্ট এর রিপলে করার চেষ্টা করবো। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।